শিশুর পারস্পরিক ক্রিয়ামুলক যত্ন –

👨‍👩‍👦 শিশুর পারস্পরিক ক্রিয়ামুলক যত্ন –
আমাদের মানষিক বিকাশ তথা মানসিক কর্মকান্ডগুলাে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়ােজন মস্তিষ্কের পরিপক্কতা। অর্থাৎ মস্তিষ্কের ভেতরে যে অসংখ্য কোষ রয়েছে , তার মধ্যে সংযােগ ঘটানো । কোষসমূহের মধ্যে সংযােগ প্রতিষ্ঠার জন্য মস্তিষ্কের খাদ্যের প্রয়োজন। আর মস্তিষ্কের সেই খাদ্য হলাে শিশু এবং তার যত্নকারী এবং চারপাশের পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন জিনিস/বস্তু/উপকরন-এর মধ্যে পাস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। যে যত্নের মাধ্যমে শিশুর সাথে যেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে তাকে ‘পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন’ বলা হয় ।


👶শিশু বিকাশের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্নের সম্পর্কঃ-
শিশুকে পারস্পরিক কিয়ামূলক যত্নের মাধ্যমে গড়ে তােলার গুরুত্ব অপরিসীম এবং বিভিন্ন পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন, যেমন শরীর মালিশ করা, ছড়া বলা, গাছ, ফুল ও ফলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, স্পর্শ করে মমতা প্রদর্শন ইত্যাদি শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, মস্তিঙ্কের কোষের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্নভাবে অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয় ব্যবহারের মাধ্যমে পারস্পরিক যত্ন নিলেই মস্তিষ্কের সবগুলি অংশ সক্রিয় হয়ে কোষের সংযােগ বৃদ্ধি করবে ।
যে বয়সের জন্য যেটা উপযুক্ত সেভাবেই পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন দেওয়া উচিত । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পানি আনা-নেয়া বা ধরে রাখার জন্য কলস তৈরির বিভিন্ন ধাপ রয়েছে ।
প্রথমে কাদা দিয়ে কলসের আকার তৈরি করা হয় , তারপর রােদে শুকানাে হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। এরপরে এটি পানি আনা-নেয়া বা ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত হয় ।
অনুরুপভাবে শিশুকে অংশগ্রহণমূলক ও বয়সােপযােগী যত্ন দেওয়া হলেই কেবলমাত্র শিশু তা পুরোপুরিভাবে করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে ।
👉 কখন কিভাবে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন প্রয়ােজন-
জন্ম থেকে শিশুর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন যেভাবে দিতে হবে –
• প্রতিদিন বারেবারে ;
• বিভিন্নভাবে অর্থাৎ, হাত ও পাসহ শিশুর পাঁচটি ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে ;
• বয়স অনুযায়ী ;
• নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশে ;
• ছেলে – শিশু ও মেয়ে – শিশু উভয়ের জন্য সমভাবে ।


🎯 শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন –
• ছড়া বলা ও গুনি করা ;
• কোলে নিয়ে আদর করা ;
• শিশুদের বিভিন্ন জিনিস চিনতে শেখানাে ;
• গল্প শোনানাে ;
• শরীর মালিশ করা ;
• পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়া ;
• বেড়ানো ;
• চুমু দেওয়া / বুকে চেপে ধরা ;
• কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ঘােরা ;
• শিশুর সাথে খেলা করা ;
• শিশুকে সাথে নিয়ে খেলনা বানানাে ;
• শিশুর সাথে কথা বলা ;
• শিশুর প্রশ্নের উত্তর দেয়া ।

🧑‍🤝‍🧑 শিশুর পারম্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা-
🎯 এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সঠিক বিকাশ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে পৌছে নিতে এখানেই বেশির ভাব বাবা-মা, পরিবার ও সমাজ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে থাকে।
👶 অল্প কথায় বলতে গেলে, শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয় পরিবার থেকে, পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন দেওয়ার মাধ্যমে শিশুর সামাজিক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় প্রাথমিকভাবে পরিবারে ।
পরিবারে মা – বাবা, ভাই – বােন, দাদা – দাদী এবং পাড়াপড়শী সবাই বয়স উপযােগী পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্নের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে এবং সেই শিশু ক্রমান্বয়ে সমাজে বেড়ে উঠবে। এর জন্য প্রয়ােজন নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ।
সুতরাং সবার আগে পরিবারের সকল সদস্যকেই শিশুর প্রারম্ভিক শৈশবের বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন ও দক্ষ করে তুলতে হবে ।
👨‍👩‍👦 শিশুর জন্য পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্নের কাজ শুরু করতে হবে মায়ের গর্ভ থেকে । জন্ম থেকে শিশুর ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । এই সময়ে একটি শিশু পরিবারে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠে । এজন্যেই বলা হয়, পরিবার ও সমাজই হচ্ছে শিশুর মানসিক বিকাশের প্রথম প্রতিষ্ঠান ।


👉 ব্যাপারটা আমি যত সহজে তুলে ধরলাম ততটা সহজ নয়। এর জন্য চাই একটি পরিবারে আন্তরিক প্রচেষ্টা, শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং সঠিক পরিকল্পনা করা।
সার্বিক সমন্বয় এর মাধ্যমেই একটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ সহজেই উন্মচিত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart