বাচ্চাকে কত বয়সে প্লে-স্কুলে/প্রি-স্কুল এ পাঠানো ঠিক হবে ?
২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে যে কোন সময় বাচ্চাদের প্লে-স্কুল বা প্রি-স্কুলে ভর্তি করা যেতে পারে। ব্রেন সংক্রান্ত রিসার্চ বলছে যে সাধারণত শিশুরা ১০০ বিলিয়ন ব্রেন সেলস নিয়ে জন্মায়।শিশুর মস্তিষ্ক তিন বছর বয়সের ভেতর দ্রুত পরিণত হতে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে একটি শিশুর মস্তিষ্কে প্রায় সাতশো নতুন সাইন্যাপ্টিক সংযোগ তৈরি হয়। যেহেতু শিশুদের ব্রেনের বিকাশ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি হয়, তাই শেখার ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করলে বিকাশ আরো দ্রুতহারে ঘটবে এবং ব্রেন সেলস স্টিমুলেট হবে। এই সময়ে যদি তারা নতুন জিনিস শেখার জন্য সহায়তা না পায় তবে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ অনেকটাই দেরিতে হয়। বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ তার ব্যক্তি সম্পর্কগুলি, অভিজ্ঞতা এবং পারিপার্শ্বিকের ওপরেও নির্ভর করে। এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে তবেই প্রি-স্কুল নির্বাচন করুন। শিশুর ওপরে যেন ভালো ফল করার বা তাড়াতাড়ি শেখার জন্য কোনরকম মানসিক চাপ না পড়ে। এই ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য একটি ভালো প্রি-স্কুল সেটাকে বলতে পারি যেখানে শিশুকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়, যাতে সে নতুন শেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
আপনার সন্তানের জন্য যথোপযুক্ত প্রি-স্কুল কোনটি?
সব বাবা-মায়েরাই চান বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ভালো একটি প্রি-স্কুল বেছে নিতে। কিন্তু তাঁদের মনে যে চিন্তাগুলো সাধারণত ঘুরপাক খায় সেগুলো হলো যে বাচ্চাদের কত বছর বয়সে স্কুল পাঠানো উচিত এবং সবচেয়ে ভালো স্কুলটাই বা তারা বেছে নেবেন কী ভাবে ! এখানে যদি আমরা ধরে নেই আমার সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভাল স্কুল মানে সবচেয়ে নামীদামি সুনামধন্য স্কুল, তবে কি সব ভাল স্কুল গুলো কি আমার বা আপনার সন্তানের জন্য যথোপযুক্ত?
বাচ্চার জন্য যথোপযুক্ত প্রি-স্কুলটি কিভাবে বেছে নিবেন?
প্রি-স্কুল বাচ্চার সামাজিক বিকাশ, পড়াশোনা শেখার ক্ষমতা এবং আবেগগত অনুভূতির ওপরে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের বিকাশেও এর ভূমিকা অপরিসীম। তাই এমন একটা প্রি-স্কুল বেছে নিন যেটা বিভিন্ন খেলা ও অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে নতুন, নতুন জিনিস শিখতে উৎসাহ দেবে। এই বয়সটা বাচ্চাদের পড়তে শেখার এবং নতুন শব্দ জানার সবচেয়ে সেরা সময়। বাচ্চারা কবে কথা বলতে পারবে নিজের থেকেই সেই জন্য শেখাটা পিছিয়ে দিলে চলবে না । তবে প্রি-স্কুলকে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করার একটা মাধ্যম হিসেবে নেবেন না। দেখে নিন প্রি-স্কুলটির পাঠ্যক্রম মজাদার, উৎসাহ বর্ধক ও সহজ কিনা। প্রি-স্কুলের পরিবেশটিও যাচাই করে নিন। যদি সেখানে বাচ্চাদের শেখানোর জন্য জরুরি উপকরণগুলি থাকে ও পরিবেশটি শেখার সহায়ক বলে মনে হয় তবেই বাচ্চাকে ভর্তি করুন। প্রি-স্কুলে কী, কী অ্যাক্টিভিটি শেখানো হয় সেটাও জানা দরকার বয়সপোযোগী অ্যাক্টিভিটিগুলোই ওদের ভাষা, হাত পা সঞ্চালন এবং কগনিটিভ উন্নয়নে সাহায্য করে। বাড়ির বড়দের কাছ থেকে বাচ্চারা যে নিরাপত্তার অনুভূতি পায় সেরকমটাই প্রি-স্কুলে টিচারদের কাছ থেকে পাওয়া দরকার। যে প্রি-স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করবেন সেখানে টিচারের অনুপাতটা একবার দেখে নিন। বাচ্চাকে যদি নিজের মত আর নিয়ম মেনে খেলাধুলো করতে দেওয়া হয় তবেই সে প্রি-স্কুলে যেতে মজা পাবে।
প্রি-স্কুল বেছে নেবার জন্য কিছু পরামর্শ :
প্রি-স্কুল বেছে নেবার সময় যে বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার সেগুলি হল আপনার বাড়ি থেকে দূরত্ব, পাঠ্যক্রম, শেখানোর পদ্ধতি, পরিচ্ছন্নত ভিত্তিক শিক্ষা, বার্ষিক ভর্তি ফি, খেলার জায়গা, প্রযুক্তির ব্যাবহার, শিক্ষিক/শিক্ষিকা ও শিশুর অনুপাত, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের কোয়ালিফিকেশন, ক্লাসরুমের সাইজ, একটি ক্লাসে পড়ুয়াদের সংখ্যা, ইনক্লুসিভ শিক্ষাব্যাবস্থা এবং প্রি-স্কুলটিতে ভর্তি হওয়ার পদ্ধতি। এর মধ্যে থেকে আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণএমন পাঁচটি বিষয় বেছে তালিকাভুক্ত করুন যে প্রি-স্কুলটি সব কটি দরকারি বিষয়ে ভালো স্কোর করবে সেটিকে বেছে নিতে পারেন। কোনো, কোনো বাবা-মায়েরা এমন প্রি-স্কুল চান যেখানে রোজ প্রার্থনা হবে। আবার অনেকে চাননা যে বিদ্যা ও ধর্ম কোনোভাবে মিশে যাক। কিছু বাবা-মা চান প্রি-স্কুলে বাচ্চাদের অক্ষর ও নাম্বার শেখানো হোক। আবার কেউ, কেউ চান এমন প্রি-স্কুল যেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলো করতে দেওয়া হবে, পড়ার জন্য চাপ থাকবে না। সবাই যে প্রি-স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করাচ্ছে, সেটাই আপনার বাচ্চার জন্য ঠিক এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। আবার, যে প্রি-স্কুলে ভর্তি হওয়া যত কঠিন সেটা তত ভালো এরকমও ভাববেন না।
আগে দেখুন প্রি-স্কুলটি আপনার দরকার গুলো মেটাচ্ছে কিনা। কারন, আপনার শিশুর বিকাশ উন্নয়ন ঘটবে খরচ সাপেক্ষ নয়, যত্ন সাপেক্ষ।